রিসালাত

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - আকাইদ | | NCTB BOOK
10
10

আকাইদের বিষয়সমূহের মধ্যে রিসালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাওহিদের পরই আসে রিসালাত। রিসালাত অর্থ সংবাদ বহন, খবর বা চিঠি পৌছানো। ইসলামি পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার বাণী, আদেশ- নিষেধ মানুষের নিকট পৌঁছানোকে রিসালাত বলে। যাঁরা এ সংবাদ পৌঁছানোর কাজ করেন তাঁরা হলেন নবি-রাসুল। রিসালাত ও নবি-রাসুলের উপর বিশ্বাস করা ফরজ বা আবশ্যক।

নবি-রাসুলের সংখ্যা
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য বহু নবি-রাসুল এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি ছিল না যেখানে আল্লাহ তায়ালা নবি-রাসুল প্রেরণ করেন নি। আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

অর্থ : “আর প্রত্যেক জাতির জন্য পথপ্রদর্শক রয়েছে ।” (সূরা আর-রা'দ, আয়াত ৭)

কুরআন মজিদে আমরা মাত্র ২৫ জন নবি-রাসুলের নাম দেখতে পাই । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক । একটি হাদিসে হযরত আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, “একবার আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নবিগণের সংখ্যা কত? উত্তরে মহানবি (স.) বললেন, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার । তন্মধ্যে তিন শত তেরো জন অপর বর্ণনা মতে তিন শত পনেরো জন হলেন রাসুল।” (মিশকাত) আরেক বর্ণনা মতে নবিগণের সংখ্যা হলো দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম নবি ছিলেন হযরত আদম (আ.), আর সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন আমাদের প্রিয় নবি হযরত মুহাম্মদ (স.)।

নবি-রাসুলের পার্থক্য
অর্থগত দিক থেকে এ দুটি শব্দের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে । আল্লাহ তায়ালা যাঁদের প্রতি আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন কিংবা নতুন শরিয়ত প্রদান করেছেন, তাঁরা হলেন রাসুল । আর যার প্রতি কোনো কিতাব অবতীর্ণ হয় নি কিংবা যাঁকে কোনো নতুন শরিয়ত দেওয়া হয় নি তিনি হলেন নবি । তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রাসুলের শরিয়ত প্রচার করতেন। এ হিসেবে সকল রাসুলই নবি ছিলেন । কিন্তু সকল নবি রাসুল ছিলেন না। যেমন— আমাদের মহানবি (স.) ছিলেন একাধারে নবি ও রাসুল। হযরত নূহ (আ.) এর উপরে কোন কিতাব নাজিল হয় নি কিন্তু তাঁর দ্বারা শরিয়তের বিধি-বিধান প্রচার ও প্রবর্তন হয়েছে । তিনিও রাসুল ছিলেন। অপরদিকে হযরত হারুন (আ.) ছিলেন মাত্র নবি। তাঁর প্রতি কোনো কিতাব নাজিল হয় নি। তিনি হযরত মুসা (আ.)-এর শরিয়ত প্রচার করতেন।

রিসালাতের তাৎপর্য নবি-রাসুলগণ ছিলেন মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত স্বরূপ। তাঁরা সকলকে তাওহিদের পথে ডাকতেন । কুফর, শিরক, নিফাক থেকে সতর্ক করতেন। উত্তম চরিত্র ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতেন । নবিগণের দাওয়াতের মূল কথা আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর বিধি-বিধান প্রচার করা । এ সম্পর্কে আল-কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

অর্থ : “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো ইলাহ নেই ।” (সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত ৭৩)

নবি-রাসুলগণের দায়িত্বকেই বলা হয় রিসালাত । এ রিসালাতের মর্ম বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন-

অর্থ: “আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসুল পাঠিয়েছি ।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৩৬)

নবি রাসুলগণ আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন । যারা তাঁদের আনুগত্য ও অনুসরণ করেছে তারা সফলকাম হয়েছে । আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রিয়নবি (স.) এর আনীত বিধান অনুসরণ করব, তাহলে আমরাও সফলকাম হব।

কাজ : শিক্ষার্থীরা রিসালাত পাঠটি নীরবে পড়বে অতঃপর রিসালাতের মর্ম সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লিখে শিক্ষককে দেখাবে।
Content added || updated By
Promotion